সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৩

মেহমাননামা


ছোট বেলায় আমাদের বাসায় কিছু অদ্ভুত ধরণের মেহমান আসতেন এবং উনাদের সাথে আনা গিফট ও থাদ্য সামগ্রী গুলোও ছিল অদ্ভুত ধরণের ! তার মধ্যে কমন দুটো থাবার ছিল 'পাইনএপেল' বিস্কুট এবং 'তালের বড়া' ( তালের রস দিয়ে বানানো সুপারি সাইজের এক ধরণের ভাজা মিষ্টি খাবার । যা মিষ্টান্ন দোকানে তৈরি করে ) !

তো, যদি কখনো টের পেতাম যে, কোন মেহমান আসছেন, তখন সবার আগে দৌড়ে মেহমানের কাছে পৌঁছে যেতাম । ছুঁ মেরে হাতে থাকা পাইনএপেলের প্যাকেট নিয়ে খড়ের গাদায় লুকিয়ে যেতাম । নিজেকে তখন সোনা জয়ী হান্টার জিম করবেট মনে হতো !

পাইনএপেল বিস্কুট প্যাকেটের সব চেয়ে বড় রহস্য ছিল এর ভেতরে থাকা কাগজের জরির আবরণ ! বুঝা দায় ছিল ঠিক জরির কতোটা ভেতরে বিস্কুট লুকিয়ে আছে ! জরি খুলতাম আর খুলতাম । অবশেষে মিলতো সবে ধন নীল মনি ! আনারসের কি মন মাতানো ঘ্রাণ ছিল ! খেতেও দারুণ স্বাদ ছিল । বিস্কুট অর্ধেক খেয়ে অর্ধেক রেখে দিতাম পরে খাব বলে । কারণ মেহমানদের সাথে পিচ্চি একটা মেয়েকেও দেখেছি যে !

হিন্দি সিনেমায় একটা কথা প্রায়শই শুনি যে, মেহমান ভগবান কি তারাহ হোতা হ্যায় ! আমাদের বাসায়ও ছিল ঠিক সে রকম রীতি । মেহমান মানেই ধুমধাম উত্‍সব । পিঁঠা-পুলি, আড্ডা, গল্প আর মজার মজার সব খাবারের বিশাল সমারোহ । কারণ সব চেয়ে সেরা রাঁধুণি যে আমার মা ! আমি থাকতাম সব চেয়ে ব্যস্ত মানুষ । বাবার সাথে রিকসায় করে বাজারে যেতাম । বড় মাছটা, বড় মোরগটা ( তখন ব্রয়লারের মোরগি পাওয়া যেতো না ) আমিই পছন্দ করতাম । সব চেয়ে আনন্দের যে বিষয়টা ছিল তা হলো, যতো দিন মেহমান থাকতো, ততো দিন আমাকে রাতে পড়তে বসতে হতো না !

মেহমানরা যে দিন চলে যাবেন, সে দিন সকালটায় সবাই মন খারাপ করে থাকতেন । চলে যাবার সময় খালারা, ফুফুরা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন । মাকে দাওয়াত দিতেন উনাদের ওখানে বেড়াতে যেতে । মা ও উনাদের আবার আসতে বলতেন । অনেকটা পথ আমরা সবাই মিলে মেহমানদের এগিয়ে দিতাম ।

উনাদের কেউ কেউ কখনো সখনো আমার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুজে দিতেন । বলতেন, মজা খাইয়ো । আমার মনে আছে, সেই পাঁচ টাকার নোটটি আমি ভাঁজ করে অনেক দিন পর্যন্ত পকেটে রেখে দিতাম । খরচ করতাম না । তখন আমার কাছে সেই পাঁচ টাকার নোটটিই ছিল পৃথিবীর সব চেয়ে বড় টাকার নোট !

তারপর অনেক দিন পর কোন মুদি দোকানে গিয়ে এক টাকার বাদাম কিনতাম । এক টাকার বাদামেই পুরো দিন পার হয়ে যেতো ! কি মুগ্ধকর শৈশবই না ছিল আমার । আফসোস, যদি হাজার বছরের যৌবন দিয়ে আমার শৈশবের একটা দিন ফিরে পেতাম !

ঘর সংসার


অনেক দিন হয়ে গেল হিমুদার সাথে দেখা হয় না । রুপাদি টা কেমন আছে দেখতে যাওয়া দরকার । রুপাদি কে লেখা তিন পাতার হিমুর একটা চিঠি আছে আমার বুক পকেটে । রুপাদি কে পৌঁছুতে হবে । অন্যের ব্যক্তিগত চিঠি পড়ার নিয়ম নেই । তবুও আমি খুলে পড়লাম । পুরো তিন পাতা জুড়েই একটা বাক্য লেখা, 'রুপা তুমি কেমন আছ ?' ।  .মানুষটা এতো পাগল !
শেষ বার যখন দেখেছি তখন মুখে অনেক লম্বা দাড়ি ছিল । মাথা ভর্তি চুল ছিল । এখন কোথায় আছে, কেমন আছে কে জানে ?

মিসির আলী সাহেব কে দেখতে যাওয়া দরকার । অতিরিক্ত সিগারেট খেয়ে ফুসফুস জ্বালিয়ে ফেলেছেন । মেডিকালে চিকিত্‍সা নিচ্ছেন । ভদ্র লোকের তিন কূলে কেউ নেই যে একটু খোঁজ খবর নেবে । অবশ্য রুনা নামের একটা মেয়ে প্রায়শই এসে খোঁজ খবর নেয় । স্যার খুব একটা কথা বলেন না বলে রুনা খুব অভিমান করে থাকে ।

শুভ্র দিন দিন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে । তাঁর বাবার কি এক গোপন অবৈধ ব্যবসার কথা জানতে পেরে বেচারা খুব মন খারাপ করে আছে । তাকে নিয়ে একবার কুয়াকাটা যাবার কথা ছিল । যেতে পারিনি ।

অর্ক না কি পাড়ায় খুব ঝামেলা বাঁধাচ্ছে । কারণে অকারণে অনেক ছেলেপুলেকে মার ধর করে । অনিমেশ কিছু করতে পারছে না । মাধবীলতাকে একাই সব সামাল দিতে হচ্ছে । ও দিকে স্কুলের চাকরিটায় ও কি এক ঝামেলা শুরু হয়েছে । এতো সংগ্রাম করে মাধবীলতা টিকে আছে কি করে কে জানে ! একবার তাদের বাড়িতেও যেতে হবে । অর্ককে বুঝাতে হবে ।

সুনীলটা এখনো ভবঘুরে । মীরাকে ভুলতে পারছে না । একবার দ্বিকশূণ্যপুর যাবার দরকার ।

আমার কতো যে কাজ পড়ে আছে ! অথচ অনেক দিন ধরেই আমি আমাকে খুঁজে পাচ্ছি না । আমার খুব হাটতে ইচ্ছে করে । খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে । আমারো কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে । একা । চুঁপচাপ !

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

আচ্ছা এই হিমু কেস্ টা কী


আচ্ছা এই হিমু কেস্ টা কী? সায়কায়াট্রিস্ট প্রশ্ন করেন লেখককে।

উনি ব্যাপারটা ভাল করে বুঝতে চান। তার চারজন পেশেন্ট – তিনজন ছেলে, একজন মেয়ে। চারজনই বলে তারা হিমু হয়েছে। এই হওয়াটার মাত্রা অস্বাভাবিক- ওদের মধ্যে দু’জন এখন ড্রাগের উপর থাকে। লেখককে ওদের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হল।

লেখক ওদের হিমু নিয়ে প্রশ্ন করে, হিমু কি কোন পীর? একজন উত্তর দেয়- হিমু পীরের বাবা। পৃথিবীর প্রত্যেক শহরে একটা করে হিমু আছে, ওরা পুরো শহরটাকে কন্ট্রোল করে। উত্তরদাতার কনফিডেন্সে লেখক চমৎকৃত। নিজের সৃষ্টির উপর তার আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। হিমু তার নাগালের বাইরে নিজের মত করে উপকথা তৈরী করে চলেছে, এমনই তার ক্ষমতা।

লেখকের সাথে প্রায়ই পকেটহীন হলুদ পাঞ্জাবী পরা খালি পায়ে যুবকদের আলাপ হয়। দেশে, এমনকি দেশান্তরে। কিছুজন হিমু হওয়ার রুলস জানতে চান। জানতে চান প্রত্যেক পূর্ণিমায় জঙ্গলে যাওয়া কম্পালসরী কিনা, এক দু’বার মিস হলে কি হবে। লেখক কিছু রুলস বানিয়ে দেন । ১৮র নিচে হলে চলবে না। খুব গরমে বা ঠান্ডায় চটি পরা যেতে পারে। পুলিস, র‌্যাব এদের সাথে হিমু সুলভ রসিকতা একদম না, এইরকম আর কি। হিমু রোগ ছোঁয়াচে ব্যাধির আকার নেয়। সদ্য তরুণ তরুণীদের মধ্যে যার প্রকোপ সর্বাধিক। উপন্যাসে হিমুর বিয়ে দেওয়ার কথা শুনেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সাহিত্যিক বন্ধুরা। এ সবই সত্য ঘটনা। এরপর যা আসছে, তা হল হিমু ধর্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা, হিমুকেই দুনিয়ার সব নৈরাজ্যবাদীদের নেতা ঘোষণা করা। সরকার কর্ত্তৃক হিমু পুস্তক ব্যান।


আচ্ছা, হিমুকে এত পাত্তা দেওয়ার কোন মানে হয়? একটি বিশেষ বয়সকালের যুববৃন্দ বলবেন, অবশ্যই হয়, আমরা তো সবাই হিমু হতে চাই। এর কারণ হল: ক) উল্টা কাজ করার, তামাম দুনিয়া ভন্ডুল করার তাগিদ এদের সব থেকে বেশী। খ) ফিল্ম-স্টার দের নকল করতে গেলে কিছুটা কসরত লাগে, চুলের স্টাইল থেকে জুতোর ব্র্যান্ড। হিমুর চুলের স্টাইল কেউ জানে না। হিমুর দৈর্ঘ্য, ওজন কি? একটা হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে বেরিয়ে গেলেই হয়। একটু হাঁটাহাঁটি করা, একটু হেঁয়ালি করে কথা বলা। হ্যাঁ, ওটি ভাল করে রপ্ত করা চাই, ওটি একটি শিল্প।

জনৈক হাবিলদার অবশ্য যুববৃন্দের সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। হিমু কে জানতে চাওয়া হলে উনি একবার বলেন- ‘ও একটা ফালতু, একেবারে ফালতু-উল্টাপাল্টা কথা কয়ে লোকের মন আওলা করে দেয়।’ হিমুর খালা, খালু, ফুপা, ফুপু তিনবার মাথা নেড়ে বক্তব্যটির সমর্থন করবেন। তিনবার কেন? তিন সংখ্যাটির একটা বিশেষ তাৎপর্য্য আছে, হিমু বলেছিল একবার, খেয়াল করে দেখতে হবে। এখন এসব তুচ্ছ ডিটেলস চুলোই যাক, না কি? অলরেডী হিমু জগতের কাল্পনিক চরিত্ররা ঢুকে পড়েছে। বাস্তব ব্যাকফুটে।

হিমু চেতনা জাঁকিয়ে বসার আগে আমি ছোট্ট করে আমার কথাটি বলে নিই। আমি একজন হিমু ফ্যান। আমাকে যখন লিখতে বলা হল হিমু নিয়ে, আমি খুশী তো হই ই তার সাথে চুড়ান্ত কনফিডেন্ট ও। ভাবটা এমন, আরে, শেষে হিমু, ও তো আমারি খাস লোক। আমার ক্যাম্পের মানুষ, যেন সত্যি সত্যি আমরা এক টেন্টে সঙ্গী ছিলাম বহু রাত, কোন এক অভিযানের পথে (অভিযানের নাম দেওয়া যাক- প্রোজেক্ট মহাপুরুষ- আর কারা কারা ছিল সেখানে? জায়গাটার নাম নাহয় পরে ঠিক করা যাবে।)

(এই চিন্তাটাই বিভ্রান্তিকর। ওই যে লেখার শুরুতে যে ছেলেগুলোর কথা বললাম, ওরাও ঠিক এরকম ভাবে, ভাবে হিমু ওদের লোক। এই আপন হয়ে যাওয়াটা হিমুর খেলা- মাইন্ড গেম নাম্বার ওয়ান। হিমু নিজেই এক জায়গায় স্বীকার করেছে- আমি যখন যার সাথে থাকি, ঠিক তারমত হয়ে যাই, তার মত কথা বলি, ফকিরের সাথে ফকির, চোরের সাথে চোর। এটি এক অসাধারণ প্রতিভা। গল্পের চরিত্রদের সাথে পাঠকরাও এই খেলার অঙ্গ হয়ে যায় নিজের অজান্তে।)

সে যাই হোক, ওই মন আওলা করে দেওয়ার ব্যাপারে আসি। ওটার একটা কায়দা আছে। হিমু কায়দা। হিমুর সাথে কথোপকথনে অনেক সময় যায়, হিমু কিন্ত নিজে বলে কম। যা বলে সহজ, স্বাভাবিক। মনে হবে একটি থিওরেম এর স্টেপ পর স্টেপের ভেতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রথম কথার পিঠে দ্বিতীয় কথাটি আসার এক চরম নিশ্চয়তা আছে।

পাঠক ও সেই মুহুর্তের শ্রোতা তাতে আকৃষ্ট হবেই,কারণ মানব মস্তিষ্ক স্ট্রাকচার ভালবাসে, অর্ডার কে আঁকড়ে ধরতে চায়, তার মনের যাবতীয় কষ্টের মূলে একটি অমীমাংসিত নৈরাজ্য, আর তার থেকে মুক্তি অর্ডার, যে কারণে সংগীত বা গণিতে সব কিছু ভুলে ডুবে থাকা যায়। হিমুর কথা তার মনের একটা অংশকে নাড়া দেয়, তাকে হিমুর প্রতি রিসেপ্টিভ করে তোলে, যদিও অন্য অংশ বলে, ‘তুমি খুব বেশী কথা বলছ, এখন গেট লস্ট।’ অথচ সে হিমুর ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে, আর ওই লজিকাল স্টেপ গুলির ফাঁকে ফাঁকে, হিমু গাদা গাদা পাগলামীর মশলা গুজে দিচ্ছে। হিমু চলে যাবার পরও তার মনে ক্রিয়া করতে থাকে হিমু-লজিক। অবশেষে আবেগময় ঊত্তরণ হয়। তার মনের নৈরাজ্য দূর হল বটে, কিন্ত তাকে রিপ্লেস করে লজিকের বদলে এক সুস্থির স্টেবল আউলাপনা ঠিক যেমনটি হিমু চায়। চোখে টলটল করে ওঠে পানী। হিমু এত কিছু কান্ড ঘটিয়েও এই আবেগের বৃত্ত থেকে নিজেকে সযত্নে বাইরে রাখে। রাখতে পারে। এতে সাহায্য করে হিমুর ছোটবেলার মহাপুরুষ ওয়ার্কশপের সি ই ও, ট্রেনার, পরম পূজনীয় হিমুর বাবার ঐতিহাসিক বাণী।

‘আবেগ বিষ্ঠার মত, আবেগ কে শরীর হইতে নির্মূল করিতে হইবে।… আবেগশূন্য না হইলে অন্যের আবেগ বুঝিতে পারিবে না’।

এই আউলাপনার ফল হয় মারাত্মক। যার যেখানে থাকার কথা না, সে সেখানে চলে যায়। বিপ্লব বলব না, স্থান কাল চরিত্রের একটা পারমুটেশন ঘটে। যা হিমু গল্পগুলোর হিউমারের মূলে। প্রতাপশালী পুলিশ অফিসার হাতির বাচ্চা উপহার দিতে কিশোরীর দোরগোড়ায় হাজির হ্য়, লক-আপে বসে ক্রিমিনাল হিমুর সাথে স্বচ্ছন্দে সব্জির দাম আর আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। মোসলেম মিয়া, পাপ ধুতে, প্রথম বৃষ্টিতে সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে উলঙ্গ হয়ে নাচেন। জনজীবন স্তব্ধ হয়। ইন্টেলিজেন্স অফিসার সব অনুসন্ধান ছেড়ে হিমুর মেসের ঘরে ভুড়িভোজ খেয়ে দিনের পর দিন ভোঁসভোঁস করে ঘুমোন। আমেরিকাবাসী গম্ভীর প্রকৃতির এন আর আই ভদ্রমহিলার সব মায়া প্রবাহিত হয় এক বস্তিবাসী শিশুর দিকে। রাস্তার দুই বাইন্ডুলে চ্যাংড়া, হিমুর বড়লোক ফুপার সাথে বসে স্কচ সেবন করে, ফুপার ফিলসফি শোনে, ফুপার মনে হয় তারা পরম আত্মীয়। এই রকম প্রচুর উদাহরণে প্রায়শই একটি সোশাল মবিলিটির ট্রেন্ড স্পষ্ট- সমাজের নিম্নস্তরের মানুষদের খুব সাবলীল ভাবে উচ্চশ্রেনীর মানুষদের সাথে মার্জ করানোর এজেন্ডা, চ্যাংড়া ফাজিল ছোটলোকদের হিমু ভাই এর নেতৃত্ত্বে বড়লোক গম্ভীর বড়সাহেবদের বৈঠকখানায় অনুপ্রবেশের বৈপ্লবিক প্লান। না, হিমুর কোন রাজনৈতিক আদর্শ নেই, সাম্য আনার কোন দায় নেয় তার, লেখকের একটা মেসেজ থাকলেও থাকতে পারে, হিমুর জন্য, ওই আগে যা বললাম, যার যেখানে থাকার কথা নয় তাকে ঠিক সেখানে পৌঁছে দেওয়ার এক অদ্ভুত শিশু/হিমু সুলভ মজা।

হিমুর প্রেমে পড়ে মেয়েরা। পড়বেই। (হিমু অনুযায়ী, মেয়েরা একবার মুগ্ধ হলে, সেই মুগ্ধতা থামে না, কন্টীনিউ করে, ছেলেরা মুগ্ধতা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালায়)। .হিমু যথাসাধ্য তাদের খুশী করে (হিমু নিজেই এক জায়গায় বলেছে, তার চেহারায় ‘আই এম অফ সার্ভিস’ গোছের কিছু লেখা আছে, যেটা বিশেষত মেয়েরা দেখতে পায়), কিন্ত তাদের প্রেম ফেরাতে পারে না। প্রেম নিয়ে হিমুর একটা থিওরী আছে। ত্থিওরীটা হল, প্রত্যেক মানুষের কাছে পাঁচটা করে নীলপদ্ম আছে, সেগুলো নিয়ে মানুষ ঘোরে, সেগুলোকে দিয়ে যেতে হবে, কাউকে না কাউকে। (আচ্ছা, পাঁচটাই কেন? ) নীলপদ্ম দেয়ানেয়ার কিছু নিয়মকানুন আছে। তবে এতে হিমুর কি? হিমুকে সাঙ্কেতিক ভাষায় প্রেমপত্র লিখলে, হিমু তার সাঙ্কেতিক জবাব দেয়, * **** ***, যার অর্থ – ‘আই লাভ ইউ, আই মিস উ, আই লস্ট ইউ’ – এর যে কোন একটা। হিমুর নায়িকারা এমনিতেই একটু বেশী অভিমানী আর রাগী হয়, এ সব হেঁয়ালীতে তাদের রাগ হয় ডাবল। রাগী মেয়ে হিমুর পছন্দ, তাদের রাগিয়ে মজা আছে, আবার তাদের টুকটাক খুশী করার জন্য সে মিথ্যার বন্যা বইয়ে দিতে পারে – কানের দুল নিয়ে, শাড়ির রং নিয়ে, মানানসই চোখের চশমা নিয়ে বিজ্ঞ মতামত দিতে পারে, রাস্তা পার হবার সুবিধের জন্য হাত তুলে সব ট্রাফিক থামিয়ে দিতে পারে। হিমুর মত সৌন্দর্যের উপাসক ও সমঝদার নেই, নারী সৌন্দর্যে সে তার মুগ্ধতা লুকোয় না, কিন্ত এরকম কোন মেয়ে হিমুর সাথে হাত ধরে পূর্ণিমার রাতে খালি পায়ে হাঁটার প্রস্তাব রাখলে হিমু বলে, সঙ্গে আসতে পার, তবে হাত ধরা যাবে না, হিমুরা কারো হাত ধরে না।

খালারা পড়েন মুস্কিলে। যেন তেন প্রকারেণ হিমুর বিয়ে দিতে হবে যে, তাতে যদি হাঁটাহাঁটি একটূ কমে। (প্রসঙ্গতঃ, খালারা না থাকলে হিমুর হিমু হওয়া বেরিয়ে যেত, বেকার হয়ে দিনের পর দিন চালানো, তার ওপর গরীবদের দানছত্র খোলার জন্য পেছনে হাজার হোক একটা সাপোর্ট চাই, যদিও অনেকে বলবেন, এগুলো সবই হিমুর আধ্যাত্মিক ভেল্কিবাজির প্রতিদানে খালার উপহার, খালার হিমুকে প্রয়োজন, উল্টোটা নয়, তবুও এরকম খালা থাকলে বাংলাদেশের কিছুজন হিমু হতে পারত, তাই খালাদের সালাম)। .কিন্তু হিমুর বিয়ে হয় না, হিমু খালাদের সাথে ফাজলামী মারে, প্রচুর মিথ্যে কথাও বলে টুকিটাকি জিনিস নিয়ে, কিন্তু সেভাবে বলে না, প্রতিশ্রুতিও রাখে, তবে সেভাবে নয়।

বাংলাদেশের পুলিশ বা র‌্যাব যদিও খালার থেকে একটু অসহিষ্ণু, এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত কথার যাদুতে, পকেটহীন পাঞ্জাবীর অদৃশ্য পকেটে হিমু তাদের অনায়াসে পুরে ফেলে। কিছু কিছু থানার ও সি তো হিমু ভাইয়ের নাম শুনলেই বিগলিত হয়ে যান। হিমু আবার কোন শুভকাজ লাগলে থানায় এসে দাওয়াত দিতে ভোলে না।

অদ্ভুত সম্পর্ক! হিমুর যে জিনিসটা তাদের সবচেয়ে চমকায়, তা হল, হিমুর আনপ্রেডিক্টেবিলিটি। হিমু পরমুহূর্তের কি বলবে বা করবে, তা কেউ জানে না। অথচ এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কোথাও কোন অস্থিরতা নেই। এটায় হিমুর এসেন্স। এটা ছড়িয়ে আছে, হিমুর চরিত্রে, ডায়লগে, হিমু উপন্যাসগুলোর গঠনে। হিমুর বাবা বলেছিলেন, ‘চন্দ্র, সুর্য, গ্রহ সর্বদা চলমান, কিন্ত তাদের এই গতিতে কোথাও কোন অস্থিরতা পাইবে না। প্রকৃতির নিয়মে অস্থিরতার স্থান নাই। আজ হইতে তোমার জীবনে অস্থিরতা নিষিদ্ধ হইল।’ হিমুর উপন্যাসগুলির শেষে আমরা যে স্বস্তিটা পাই, তা শুধুই শুভ সমাপ্তি জনিত ‘অল ইজ ওয়েল উইথ দ্য ওয়ার্ল্ড’ অনুভূতি নয়, মানসিক স্থিরতাও তার একটি প্রধান অংশ।

লেখক নিজে একবার লিখেছিলেন- হিমু ইন্টিউশান-এ চলে, মিশির আলি লজিকে। হিমুকে কিন্ত অনেক সময় দেখা যায়, আপাতদৃষ্টিতে একটি অলৌকিক ঘটনার, সহজ যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিতে। এতে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ক্রেডিট চলে যাবে জেনেও, সেটা দেয় সে, কারণ সে জানে সংশ্লিষ্ট মানুষটি ততক্ষণে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে মেনে নিয়েছে, ম্যাজিকের সাথেই সে ‘এট হোম’ ফিল করছে, অতএব তাকে নেক্সট রাউন্ড অফ চমকানোর জন্য আমদানি কর যুক্তি। মানুষকে চমকানোর সুযোগ হিমু কি কখনো ছাড়ে। বাদলের গলায় কাঁটা লেগেছে, কিছুতেই যাচ্ছে না, বাড়ী জুড়ে শোকের ছায়া, হিমু ভাই এসে মজার মজার কথা বলে বাদলকে হাল্কা করে দিল, তার মন ঘোরাল, এতে তার গলার মাসল, যেটা এতক্ষন টেনশনে শক্ত ছিল, কিছুটা রিলাক্স হল, তারপর একসাথে গরম ভাত আর মাখন খেল দু’জনে। কাঁটা ভ্যানিশ। পুলিশের বড়কর্তার হিমুকে থাপ্পড় মারতে গিয়ে স্ট্রোক হয়, কোমা থেকে আসার পর উনি খালি দেখেন হিমু হলুদ পাঙ্গাবী পরে হাসিমুখে তার দিকে হাত বাড়িয়ে । সবাই বলে, হিমু পীর, হিমু স্বপ্নে দেখা দিচ্ছে, হিমু বলে, বড়কর্তার জ্ঞান হারানোর আগে শেষ ইমেজটা হিমুর, তাই সেটা ব্রেনে গঁেথে গেছে। এরকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়, তার ভবিষ্যৎ দেখার একটা বড় উপায় হল, মানুষকে খুব ভাল করে বোঝা, একটা মানুষ একটা বিশেষ অবস্থায় পড়লে কি ভাবে রিএক্ট করবে তা খুব ভাল করে জানা।

হিমুর নিজের ব্রেন যেহেতু বেশ স্বাধীন, হিমু অবাধে ক্ষুদ্র ডিটেলস-এ বিচরণ করে যায়। এটা আমরা পারব না। কারণ হিমুর কাছে, ভবিষ্যতের উপর বর্তমানের, ক্ষুদ্র প্রাণী, নদী, আসবাব, এদের ওপর এই মুহূর্তের মানুষের কোন বিশেষ স্থান নেই। সবি এক প্লেনে বিরাজমান। যখন যা মনে ধরে, তাতে হিমু চলে যায়, ভেসে যায়। হিমুর সাথে যারা বিশেষ দরকারী আলোচনা করে তারা এগুলোতে বিরক্ত হয়, ভাবে অপ্রাসঙ্গিক। এই যেমন পাঁচটা নীলপদ্ম কেন, তিনটে কেন নয়, এ নিয়ে নিশ্চয় হিমুর এক থিওরী থাকত, বা এই যে আমি লিখেছিলাম, টেন্ট এর কথা, হিমু আমার মত সেটা পাশ কাটিয়ে চলে যেত না, সেই অভিযান এর জায়গাটার একটা নাম দিত, সেলসিয়াস স্কেলে গ্রীষ্ম ও শীতে দুই ডেসিমাল ফিগার অব্দি দিনরাতের তাপমাত্রার একটা নিউমারিকাল এস্টিমেট দিত, সেখানকার পাখিদের আকৃতি নিয়ে বলত, গন্তব্যে পৌঁছনোর পর আমার আর ওর একটা পুরো কাল্পনিক ডায়লগ নামিয়ে দিত। এক সম্পূর্ণ নতুন দুনিয়া অনায়াসে কথায় কথায় চলে আসত, আর মিলিয়ে যেত……।

আচ্ছা হিমুর হিমুত্ব কি কোনদিন শেষ হবে? হতেই পারে এই হিমুর বাবা লোকটি, নর্মান বেটসের মা-এর মত হিমু্রই তৈরি এক কন্সট্রাক্ট, তার বাণীগুলি সব হিমুর বানানো, ছোটবেলার চূড়ান্ত আবেগময় কোন স্মৃতিকে আটকানোর প্রয়াসে এক সুচতুর ডিফেন্স মেকানিসম। না, হিমু সাইকো নয়, যদিও এই আপাত আবেগহীনতা দেখে একজন হিমুকে সিরিয়াল কিলার বলেছিলেন। সিরিয়াল কিলার আর মহাপুরুষের বিভাজন রেখা কি এত্ই সরু? কিন্ত হিমুর তো কৃষ্ণচূড়া গাছের প্রতিও মায়া আছে, ও তো জড়পদার্থেও কাল্পনিক প্রাণ সঞ্চার করে, রোগীর সাথে হাসপাতালে দেখা করতে এলে, প্রথমে জীবাণুদের কুশল জিজ্ঞেস করে, বলে ‘হ্যালো জীবাণু।’ হিমু কোন কিলার নয়, আমরা জানি, হিমু এক সংবেদনশীল, পরম মমতাময় মানুষ।

বা মসীহা। যাকে ইশ্বর বঙ্গ দেশে পাঠিয়েছেন বিশেষ কাজে। ‘এ দেশের লোক বড়ই সিনিকাল, নিজ বুদ্ধির উপর বড়ই ঘ্যাম ইহাদের, মার্ক্সবাদী নাস্তিকতা ও ভ্রান্ত মৌলবাদে ইহারা গা ভাসায়, এদের বাগে আনা সহজ নয়, তার উপর ইহারা অলস, ধর্মীয় বিধি পালনের কঠোরতা ইহাদের জন্য নহে। তুমি যাও উহাদের ফাজলামীর বিপরীতে তিনগুণ ফাজলামী করিয়া মন আওলা করিয়া দিয়া এস।’

ব্যাস। হলুদ পাঞ্জাবী আর খালি পায়ে সটান ঢাকার রাস্তায়। আর আমরা পেছনে হাঁটছি। কেউ কেউ আবার সেই ড্রাগ এডিক্ট যুবকটির মত হাঁটার তৎপরতায় হিমুকেও ওভারটেক করে বেরিয়ে যাচ্ছে। অতি-হিমু বলে কি কিছু হয়? হলেও, ওটা কোন কাজের কথা নয়। হিমু হওয়াতেই বাহাদুরি। আসুন, আমরা হিমুর পা ফেলা মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করি। হিমুর সঙ্গে হাঁটি।

বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৩

সম্পূর্ন ফানগল্প------ হিমু এবং একজন বাংলাদেশী গায়িকা




হিমুর ঘুম ভেঙে গেল।অজস্র কাকার কা কা শব্দ ছুটে আসছে।তার ঘুম ভাঙার কারণ সেটাই।কবি বলেছিলেন, পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে, হিমুর মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব কাক ডাকিতেছে এখানে।সে চোখ পিট পিট করে তাকাল।এ ব্যাপারে তার বাবা উপদেশ বানীতে লিখে গিয়েছিলেন,


“বাবা হিমু, কাকপক্ষীর কা কা ধ্বনি শুনিয়া যদি সকালের ঘুম ভাঙিয়া যায় তাহলে মানুষ মনে করে তাহাদের অমঙ্গল হইব।জননী তাহার পুত্রের ক্ষতি হইবে ভাবিয়া চিন্তায় আকুল হয়। এই মাতৃ জাতি নিয়া সমস্যা। এরা আকুল হইবার জন্য বসিয়া থাকে।মহাপু্রুষদের জননী থাকিতে নেই।তাই তোমার ও জননী নেই।বাবা হিমু, বলছিলাম কাকাপক্ষীর কথা।এই পক্ষী নিয়া অনেক কুসংস্কার আছে।তুমি ওইগুলি বিশ্বাস করিবে না, অবিশ্বাস ও করিবে না।মহাপুরুষেরা কোন কিছু বিশ্বাস করেন না, অবিশ্বাস ও করেন না।তাহারা মানুষের মনে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেন।কাকপক্ষীর ডাক শুনিয়া তোমার নিদ্রাভঙ্গ হইলে চোখ পিট পিট করিয়া তাকাইবে।ইহাই নিয়ম।”


হিমু চোখ পিট পিট করিয়া তাকাইয়া ঝাপসা কিছু দেখল।ঝাপসা জিনিসটা আস্তে আস্তে পরিস্কার হওয়ার সাথে সাথে কাকের শব্দও থেমে গেল।


আপনি হিমু?

হিমুর সামনে যে ভদ্রলোক বসে আছেন তিনি দেখতে জীবনানন্দ দাশের মত।


হিমু আশ্চর্য হল না।হিমুদের আশ্চর্য হতে নেই।সে হাসিমুখে জবাব দিল, জি। আমি হিমু।



ভদ্রলোক গলা খাকারি দিয়ে বললেন, হিমু ভাই আমি আপনাকে কবিতা শোনাতে এসেছি।


শোনান।

“সন্ধ্যা হয় চারিদিকে মৃদু নীরবতা

কুটা মুখে নিয়ে এক শালিখ যেতেছে উড়ে চুপে

গরুর গাড়িটি যায় মেঠো পথ বেয়ে ধীরে ধীরে

আঙিনা ভরিয়া আছে সোনালি খড়ের স্তুপে

পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে

পৃথিবীর সব রুপ লেগে আছে ঘাসে”


কবিতা শুনতে শুনতে হিমু ঘুমিয়ে পড়ল আবার।



হিমু রাস্তায় বের হয়েছে।হলুদ পাঞ্জাবী এবং জুতা ছাড়া পা নিয়ে হেঠে যাচ্ছে।এমন সময় হঠাৎ একটি পাজেরো তার ঠিক পিছনে এসে থামল।হিমু পিছনে তাকাল না।সে আগের মতই হাঠতে লাগল।


এই হিমু। হিমু........................ পিছন থেকে একজন কিন্নরকন্ঠী হিমুকে ডাকছেন।
>

হিমু ঘুরে তাকাল।হলুদ শাড়ি পরা এক ভদ্রমহিলা।উনি কি মাজেদা খালা?না মাজেদা খালার ত বয়স অনেক বেশী।তার ওপর তিনি একটা ছোটখাট হাতির মত।এখন যে ভদ্রমহিলা সামনে তার বয়স অনেক কম হবে এবং তাকে কোন ক্রমেই হাতি বলা যায় না।বড়জোর হাতির বাচ্চা বলা যায়।

হিমু সুন্দর করে হাসল।

ভদ্রমহিলা বললেন, হিমু আপনি আমার গাড়িতে উঠেন।তাড়াতাড়ি।কুইক।


কি ব্যাপার! মাজেদা খালা কি কোনভাবে স্বাস্থ্য টাস্থ্য কমিয়ে এরকম ভাব ধরেছেন নাকী।হিমু বাধ্য ছেলের মত গিয়ে গাড়িতে উঠল।


এক আলিশান বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামল।মহিলা হিমুকে নিয়ে ভিতরে গেলেন।এতক্ষন তিনি কোন কথাই বলেন নি।চুপ করে বসেছিলেন।হিমুও বলে নি।সে এই মহিলাকে চিনতে পারছে না।

মহিলা এবার হিমুকে বসিয়ে বললেন , হিমু আমি আপনার কথা অনেক পড়েছি।আমি আপনার সাহায্য চাই।আই ওয়ান্ট ইওর হেল্প।

হিমু বলল কি সাহায্য? থানা পুলিশ জাতীয় কিছু?

মহিলা হিমুর আরেকটু কাছে এসে বললেন না।আমি একজন সিঙার।মানে গান গাই।আজ আপনাকে এখানে আনার কারণ কয়েকটা গান শোনানো।কোন একটি আশ্চর্য কারণে আমার এলবাম বের হবার কয়েকদিনের মধ্যেই কাকেরা চিৎকার করতে থাকে।আমি এটার কোন কারন বুঝতে পারছি না।



হিমু গম্ভীর হয়ে বলল, সব বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।বিরোধী দলের সাথেও আমার খাতির ভাল।আচ্ছা আপনার সকল এলবামের আগে মন কেন? এত যদি মন তাহলে আপনি তো মনে মনে গাইলেই পারতেন।কিছু কাকের জীবন রক্ষা হত।

আর বলবেন না।গান গাইতে গেলে আমার মন কেমন কেমন করে।তাই এই নাম,

১।.মনের ছোট্ট ঘরে,

২।.মন ছুঁয়ে যায়,

৩।. মন মানে না,

৪।.মন দিয়েছি তোমাকে,

৫।.মন নাচেরে,

৬।.মনের তুলিতে আঁকি

একটা রবীন্দ্র সঙীত নিয়েও করেছি।অ্যালবামের নাম মনে কী দ্বিধা...


আপ্নে নাকী রবীন্দ্রনাথের পিছেও লাগছেন? বুড়া লোকটার পিছন ক্যানো লাগলেন?দেখেন না তার সারা মুখে দাড়ি।কোনদিক দিয়া ভাত খায় তারই ঠিক নাই।


ঠিক বলেছেন।গায়িকা সায় দেন।

হিমু আবার বলে, গুনগুন করে গান গাওয়াই উচিত ছিল আপনার।এই গান গাইয়া কত গরু ছাগল মহিষ পাগল করছেন জানেন?এখন আপ্নার গান না শুনলে তারা ঘুমায় না? গরীব চাষীরা হালের বলদ দের আপনার গান শুনাইব ক্যাম্নে?তারপর ষাড়েরা আপনার মিউজিক ভিড্যু না দেখলে পাগল হইয়া যায়। এখন আপ্নার জামাই মহফুজ কি তাদের টিভি সাপ্লাই দিব?

এই সমস্যার জন্যই ত আপনাকে ডাকলাম।একটা উপায় বের করেন।আমার নতুন এলবাম ইশক দিওয়ানা থেকে একটা গান শুনেন।বলেই মহিলা স্টার্ট দিলেন।


হিমু বুঝতে পারল ইদানীং কেন তার কাকের কা কা শুনে ঘুম থেকে উঠতে হয়।মহিষগুলো কেন মানুষ দেখলেই তেড়ে মারতে আসে। মহিলা গান গেয়ে চলেছেন।হিমু এর আগে এরকম পরিশ্তহিতে পড়ে নি।হিমুর বাবা উপদেশ বানীতে বলেছিলেন, মাথা ঠান্ডা রাখতে সবসময়।মহাপুরুষেরা মাথা গরম করেন না।


কিন্তু হিমু আজ কি করবে ভেবে পেল না।মহিলা দ্বিতীয় গান শুরু করেছেন।হঠাৎ হিমু ঝেড়ে দৌড় দিল। তারপর থেকে সে দৌড়ের উপর আছে।এইখানেই গল্প শেষ হইতে পারিত - কিন্তু হিমুর মাথায় ভর করেছে - পাভেল। সে হিমুর বাপ। হিমু আজকাল তাকেই মুরুব্বি মানে। অর্থাৎ বস মানে।


তাই হিমুর ঝেড়ে দৌড় দেওয়ার কথা থাকল, সে দৌড় দিল না। গাইতে গাইতে গায়িকা যেই চোখ বন্ধ করল - সেই ফাকে হিমু স্লিপ কাটল। বাসায় ফিরে এসে দেখে রুপা পোলাও মাংস পাঠিয়ে দিয়েছে। আশ্চর্য্য ব্যাপার আজ সকালেই তার পোলাও খেতে ইচ্ছা করছিল। রুপা কেমনে জানল।


ঠিক এই সময় রুপার ফোন এল - রুপা জানাল সে এখন গাজীপুরে। তা নাহলে নিজেই চলে আসত হ্যাপী বার্থ ডে জানাতে। নিজেকে আজকে নাকি ইভা ইভা লাগছে। আবার গুন গুন করে মাছির মত ভ্যান ভ্যান করছে। রুপা প্রতি বছরই একই কথা বলে। মিথ্যুক মেয়ে - কিন্তু জোসনার মত পবিত্র। এত ঘন ঘন গাজীপুর যায় কেন! সেখানে নানান কিসিমের রেষ্ট হাউজে তার এত কি কাম! না আর ভাবতে পারে না হিমু। জোসনার পবিত্রতা নিয়ে সে গাজীপুরে জংগলে রেষ্ট হাউজে কি করে! পোলাও খায় আর ভাবে একদিন যাইয়্যা সারপ্রাইজ দিওন লাগব। নাকি আবার নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যেতে হবে। ডাইরী খুলে দেখতে হবে বাবায় কি কইয়্যা গেছে - "হে মানব সন্তানগন, তোমরা কোন কিছুতেই সারপ্রাইজ হইও না। কারন সারপ্রাইজের প্রাইজ অনেক বেশি"।

Collection : http://www.amarblog.com/

হিমু


আচ্ছা এই হিমু কেস্ টা কী? সায়কায়াট্রিস্ট প্রশ্ন করেন লেখককে।

উনি ব্যাপারটা ভাল করে বুঝতে চান। তার চারজন পেশেন্ট – তিনজন ছেলে, একজন মেয়ে। চারজনই বলে তারা হিমু হয়েছে। এই হওয়াটার মাত্রা অস্বাভাবিক- ওদের মধ্যে দু’জন এখন ড্রাগের উপর থাকে। লেখককে ওদের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হল।

লেখক ওদের হিমু নিয়ে প্রশ্ন করে, হিমু কি কোন পীর? একজন উত্তর দেয়- হিমু পীরের বাবা। পৃথিবীর প্রত্যেক শহরে একটা করে হিমু আছে, ওরা পুরো শহরটাকে কন্ট্রোল করে। উত্তরদাতার কনফিডেন্সে লেখক চমৎকৃত। নিজের সৃষ্টির উপর তার আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। হিমু তার নাগালের বাইরে নিজের মত করে উপকথা তৈরী করে চলেছে, এমনই তার ক্ষমতা।

লেখকের সাথে প্রায়ই পকেটহীন হলুদ পাঞ্জাবী পরা খালি পায়ে যুবকদের আলাপ হয়। দেশে, এমনকি দেশান্তরে। কিছুজন হিমু হওয়ার রুলস জানতে চান। জানতে চান প্রত্যেক পূর্ণিমায় জঙ্গলে যাওয়া কম্পালসরী কিনা, এক দু’বার মিস হলে কি হবে। লেখক কিছু রুলস বানিয়ে দেন । ১৮র নিচে হলে চলবে না। খুব গরমে বা ঠান্ডায় চটি পরা যেতে পারে। পুলিস, র‌্যাব এদের সাথে হিমু সুলভ রসিকতা একদম না, এইরকম আর কি। হিমু রোগ ছোঁয়াচে ব্যাধির আকার নেয়। সদ্য তরুণ তরুণীদের মধ্যে যার প্রকোপ সর্বাধিক। উপন্যাসে হিমুর বিয়ে দেওয়ার কথা শুনেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সাহিত্যিক বন্ধুরা। এ সবই সত্য ঘটনা। এরপর যা আসছে, তা হল হিমু ধর্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা, হিমুকেই দুনিয়ার সব নৈরাজ্যবাদীদের নেতা ঘোষণা করা। সরকার কর্ত্তৃক হিমু পুস্তক ব্যান।


আচ্ছা, হিমুকে এত পাত্তা দেওয়ার কোন মানে হয়? একটি বিশেষ বয়সকালের যুববৃন্দ বলবেন, অবশ্যই হয়, আমরা তো সবাই হিমু হতে চাই। এর কারণ হল: ক) উল্টা কাজ করার, তামাম দুনিয়া ভন্ডুল করার তাগিদ এদের সব থেকে বেশী। খ) ফিল্ম-স্টার দের নকল করতে গেলে কিছুটা কসরত লাগে, চুলের স্টাইল থেকে জুতোর ব্র্যান্ড। হিমুর চুলের স্টাইল কেউ জানে না। হিমুর দৈর্ঘ্য, ওজন কি? একটা হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে বেরিয়ে গেলেই হয়। একটু হাঁটাহাঁটি করা, একটু হেঁয়ালি করে কথা বলা। হ্যাঁ, ওটি ভাল করে রপ্ত করা চাই, ওটি একটি শিল্প।

জনৈক হাবিলদার অবশ্য যুববৃন্দের সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। হিমু কে জানতে চাওয়া হলে উনি একবার বলেন- ‘ও একটা ফালতু, একেবারে ফালতু-উল্টাপাল্টা কথা কয়ে লোকের মন আওলা করে দেয়।’ হিমুর খালা, খালু, ফুপা, ফুপু তিনবার মাথা নেড়ে বক্তব্যটির সমর্থন করবেন। তিনবার কেন? তিন সংখ্যাটির একটা বিশেষ তাৎপর্য্য আছে, হিমু বলেছিল একবার, খেয়াল করে দেখতে হবে। এখন এসব তুচ্ছ ডিটেলস চুলোই যাক, না কি? অলরেডী হিমু জগতের কাল্পনিক চরিত্ররা ঢুকে পড়েছে। বাস্তব ব্যাকফুটে।

হিমু চেতনা জাঁকিয়ে বসার আগে আমি ছোট্ট করে আমার কথাটি বলে নিই। আমি একজন হিমু ফ্যান। আমাকে যখন লিখতে বলা হল হিমু নিয়ে, আমি খুশী তো হই ই তার সাথে চুড়ান্ত কনফিডেন্ট ও। ভাবটা এমন, আরে, শেষে হিমু, ও তো আমারি খাস লোক। আমার ক্যাম্পের মানুষ, যেন সত্যি সত্যি আমরা এক টেন্টে সঙ্গী ছিলাম বহু রাত, কোন এক অভিযানের পথে (অভিযানের নাম দেওয়া যাক- প্রোজেক্ট মহাপুরুষ- আর কারা কারা ছিল সেখানে? জায়গাটার নাম নাহয় পরে ঠিক করা যাবে।)

(এই চিন্তাটাই বিভ্রান্তিকর। ওই যে লেখার শুরুতে যে ছেলেগুলোর কথা বললাম, ওরাও ঠিক এরকম ভাবে, ভাবে হিমু ওদের লোক। এই আপন হয়ে যাওয়াটা হিমুর খেলা- মাইন্ড গেম নাম্বার ওয়ান। হিমু নিজেই এক জায়গায় স্বীকার করেছে- আমি যখন যার সাথে থাকি, ঠিক তারমত হয়ে যাই, তার মত কথা বলি, ফকিরের সাথে ফকির, চোরের সাথে চোর। এটি এক অসাধারণ প্রতিভা। গল্পের চরিত্রদের সাথে পাঠকরাও এই খেলার অঙ্গ হয়ে যায় নিজের অজান্তে।)

সে যাই হোক, ওই মন আওলা করে দেওয়ার ব্যাপারে আসি। ওটার একটা কায়দা আছে। হিমু কায়দা। হিমুর সাথে কথোপকথনে অনেক সময় যায়, হিমু কিন্ত নিজে বলে কম। যা বলে সহজ, স্বাভাবিক। মনে হবে একটি থিওরেম এর স্টেপ পর স্টেপের ভেতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রথম কথার পিঠে দ্বিতীয় কথাটি আসার এক চরম নিশ্চয়তা আছে।

পাঠক ও সেই মুহুর্তের শ্রোতা তাতে আকৃষ্ট হবেই,কারণ মানব মস্তিষ্ক স্ট্রাকচার ভালবাসে, অর্ডার কে আঁকড়ে ধরতে চায়, তার মনের যাবতীয় কষ্টের মূলে একটি অমীমাংসিত নৈরাজ্য, আর তার থেকে মুক্তি অর্ডার, যে কারণে সংগীত বা গণিতে সব কিছু ভুলে ডুবে থাকা যায়। হিমুর কথা তার মনের একটা অংশকে নাড়া দেয়, তাকে হিমুর প্রতি রিসেপ্টিভ করে তোলে, যদিও অন্য অংশ বলে, ‘তুমি খুব বেশী কথা বলছ, এখন গেট লস্ট।’ অথচ সে হিমুর ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে, আর ওই লজিকাল স্টেপ গুলির ফাঁকে ফাঁকে, হিমু গাদা গাদা পাগলামীর মশলা গুজে দিচ্ছে। হিমু চলে যাবার পরও তার মনে ক্রিয়া করতে থাকে হিমু-লজিক। অবশেষে আবেগময় ঊত্তরণ হয়। তার মনের নৈরাজ্য দূর হল বটে, কিন্ত তাকে রিপ্লেস করে লজিকের বদলে এক সুস্থির স্টেবল আউলাপনা ঠিক যেমনটি হিমু চায়। চোখে টলটল করে ওঠে পানী। হিমু এত কিছু কান্ড ঘটিয়েও এই আবেগের বৃত্ত থেকে নিজেকে সযত্নে বাইরে রাখে। রাখতে পারে। এতে সাহায্য করে হিমুর ছোটবেলার মহাপুরুষ ওয়ার্কশপের সি ই ও, ট্রেনার, পরম পূজনীয় হিমুর বাবার ঐতিহাসিক বাণী।

‘আবেগ বিষ্ঠার মত, আবেগ কে শরীর হইতে নির্মূল করিতে হইবে।… আবেগশূন্য না হইলে অন্যের আবেগ বুঝিতে পারিবে না’।

এই আউলাপনার ফল হয় মারাত্মক। যার যেখানে থাকার কথা না, সে সেখানে চলে যায়। বিপ্লব বলব না, স্থান কাল চরিত্রের একটা পারমুটেশন ঘটে। যা হিমু গল্পগুলোর হিউমারের মূলে। প্রতাপশালী পুলিশ অফিসার হাতির বাচ্চা উপহার দিতে কিশোরীর দোরগোড়ায় হাজির হ্য়, লক-আপে বসে ক্রিমিনাল হিমুর সাথে স্বচ্ছন্দে সব্জির দাম আর আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। মোসলেম মিয়া, পাপ ধুতে, প্রথম বৃষ্টিতে সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে উলঙ্গ হয়ে নাচেন। জনজীবন স্তব্ধ হয়। ইন্টেলিজেন্স অফিসার সব অনুসন্ধান ছেড়ে হিমুর মেসের ঘরে ভুড়িভোজ খেয়ে দিনের পর দিন ভোঁসভোঁস করে ঘুমোন। আমেরিকাবাসী গম্ভীর প্রকৃতির এন আর আই ভদ্রমহিলার সব মায়া প্রবাহিত হয় এক বস্তিবাসী শিশুর দিকে। রাস্তার দুই বাইন্ডুলে চ্যাংড়া, হিমুর বড়লোক ফুপার সাথে বসে স্কচ সেবন করে, ফুপার ফিলসফি শোনে, ফুপার মনে হয় তারা পরম আত্মীয়। এই রকম প্রচুর উদাহরণে প্রায়শই একটি সোশাল মবিলিটির ট্রেন্ড স্পষ্ট- সমাজের নিম্নস্তরের মানুষদের খুব সাবলীল ভাবে উচ্চশ্রেনীর মানুষদের সাথে মার্জ করানোর এজেন্ডা, চ্যাংড়া ফাজিল ছোটলোকদের হিমু ভাই এর নেতৃত্ত্বে বড়লোক গম্ভীর বড়সাহেবদের বৈঠকখানায় অনুপ্রবেশের বৈপ্লবিক প্লান। না, হিমুর কোন রাজনৈতিক আদর্শ নেই, সাম্য আনার কোন দায় নেয় তার, লেখকের একটা মেসেজ থাকলেও থাকতে পারে, হিমুর জন্য, ওই আগে যা বললাম, যার যেখানে থাকার কথা নয় তাকে ঠিক সেখানে পৌঁছে দেওয়ার এক অদ্ভুত শিশু/হিমু সুলভ মজা।

হিমুর প্রেমে পড়ে মেয়েরা। পড়বেই। (হিমু অনুযায়ী, মেয়েরা একবার মুগ্ধ হলে, সেই মুগ্ধতা থামে না, কন্টীনিউ করে, ছেলেরা মুগ্ধতা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালায়)।. হিমু যথাসাধ্য তাদের খুশী করে (হিমু নিজেই এক জায়গায় বলেছে, তার চেহারায় ‘আই এম অফ সার্ভিস’ গোছের কিছু লেখা আছে, যেটা বিশেষত মেয়েরা দেখতে পায়), কিন্ত তাদের প্রেম ফেরাতে পারে না। প্রেম নিয়ে হিমুর একটা থিওরী আছে। ত্থিওরীটা হল, প্রত্যেক মানুষের কাছে পাঁচটা করে নীলপদ্ম আছে, সেগুলো নিয়ে মানুষ ঘোরে, সেগুলোকে দিয়ে যেতে হবে, কাউকে না কাউকে। (আচ্ছা, পাঁচটাই কেন? ) নীলপদ্ম দেয়ানেয়ার কিছু নিয়মকানুন আছে। তবে এতে হিমুর কি? হিমুকে সাঙ্কেতিক ভাষায় প্রেমপত্র লিখলে, হিমু তার সাঙ্কেতিক জবাব দেয়, -------, যার অর্থ – ‘আই লাভ ইউ, আই মিস উ, আই লস্ট ইউ’ – এর যে কোন একটা। হিমুর নায়িকারা এমনিতেই একটু বেশী অভিমানী আর রাগী হয়, এ সব হেঁয়ালীতে তাদের রাগ হয় ডাবল। রাগী মেয়ে হিমুর পছন্দ, তাদের রাগিয়ে মজা আছে, আবার তাদের টুকটাক খুশী করার জন্য সে মিথ্যার বন্যা বইয়ে দিতে পারে – কানের দুল নিয়ে, শাড়ির রং নিয়ে, মানানসই চোখের চশমা নিয়ে বিজ্ঞ মতামত দিতে পারে, রাস্তা পার হবার সুবিধের জন্য হাত তুলে সব ট্রাফিক থামিয়ে দিতে পারে। হিমুর মত সৌন্দর্যের উপাসক ও সমঝদার নেই, নারী সৌন্দর্যে সে তার মুগ্ধতা লুকোয় না, কিন্ত এরকম কোন মেয়ে হিমুর সাথে হাত ধরে পূর্ণিমার রাতে খালি পায়ে হাঁটার প্রস্তাব রাখলে হিমু বলে, সঙ্গে আসতে পার, তবে হাত ধরা যাবে না, হিমুরা কারো হাত ধরে না।

খালারা পড়েন মুস্কিলে। যেন তেন প্রকারেণ হিমুর বিয়ে দিতে হবে যে, তাতে যদি হাঁটাহাঁটি একটূ কমে। (প্রসঙ্গতঃ, খালারা না থাকলে হিমুর হিমু হওয়া বেরিয়ে যেত, বেকার হয়ে দিনের পর দিন চালানো, তার ওপর গরীবদের দানছত্র খোলার জন্য পেছনে হাজার হোক একটা সাপোর্ট চাই, যদিও অনেকে বলবেন, এগুলো সবই হিমুর আধ্যাত্মিক ভেল্কিবাজির প্রতিদানে খালার উপহার, খালার হিমুকে প্রয়োজন, উল্টোটা নয়, তবুও এরকম খালা থাকলে বাংলাদেশের কিছুজন হিমু হতে পারত, তাই খালাদের সালাম)।. কিন্তু হিমুর বিয়ে হয় না, হিমু খালাদের সাথে ফাজলামী মারে, প্রচুর মিথ্যে কথাও বলে টুকিটাকি জিনিস নিয়ে, কিন্তু সেভাবে বলে না, প্রতিশ্রুতিও রাখে, তবে সেভাবে নয়।

বাংলাদেশের পুলিশ বা র‌্যাব যদিও খালার থেকে একটু অসহিষ্ণু, এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত কথার যাদুতে, পকেটহীন পাঞ্জাবীর অদৃশ্য পকেটে হিমু তাদের অনায়াসে পুরে ফেলে। কিছু কিছু থানার ও সি তো হিমু ভাইয়ের নাম শুনলেই বিগলিত হয়ে যান। হিমু আবার কোন শুভকাজ লাগলে থানায় এসে দাওয়াত দিতে ভোলে না।

অদ্ভুত সম্পর্ক! হিমুর যে জিনিসটা তাদের সবচেয়ে চমকায়, তা হল, হিমুর আনপ্রেডিক্টেবিলিটি। হিমু পরমুহূর্তের কি বলবে বা করবে, তা কেউ জানে না। অথচ এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কোথাও কোন অস্থিরতা নেই। এটায় হিমুর এসেন্স। এটা ছড়িয়ে আছে, হিমুর চরিত্রে, ডায়লগে, হিমু উপন্যাসগুলোর গঠনে। হিমুর বাবা বলেছিলেন, ‘চন্দ্র, সুর্য, গ্রহ সর্বদা চলমান, কিন্ত তাদের এই গতিতে কোথাও কোন অস্থিরতা পাইবে না। প্রকৃতির নিয়মে অস্থিরতার স্থান নাই। আজ হইতে তোমার জীবনে অস্থিরতা নিষিদ্ধ হইল।’ হিমুর উপন্যাসগুলির শেষে আমরা যে স্বস্তিটা পাই, তা শুধুই শুভ সমাপ্তি জনিত ‘অল ইজ ওয়েল উইথ দ্য ওয়ার্ল্ড’ অনুভূতি নয়, মানসিক স্থিরতাও তার একটি প্রধান অংশ।

লেখক নিজে একবার লিখেছিলেন- হিমু ইন্টিউশান-এ চলে, মিশির আলি লজিকে। হিমুকে কিন্ত অনেক সময় দেখা যায়, আপাতদৃষ্টিতে একটি অলৌকিক ঘটনার, সহজ যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিতে। এতে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ক্রেডিট চলে যাবে জেনেও, সেটা দেয় সে, কারণ সে জানে সংশ্লিষ্ট মানুষটি ততক্ষণে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে মেনে নিয়েছে, ম্যাজিকের সাথেই সে ‘এট হোম’ ফিল করছে, অতএব তাকে নেক্সট রাউন্ড অফ চমকানোর জন্য আমদানি কর যুক্তি। মানুষকে চমকানোর সুযোগ হিমু কি কখনো ছাড়ে। বাদলের গলায় কাঁটা লেগেছে, কিছুতেই যাচ্ছে না, বাড়ী জুড়ে শোকের ছায়া, হিমু ভাই এসে মজার মজার কথা বলে বাদলকে হাল্কা করে দিল, তার মন ঘোরাল, এতে তার গলার মাসল, যেটা এতক্ষন টেনশনে শক্ত ছিল, কিছুটা রিলাক্স হল, তারপর একসাথে গরম ভাত আর মাখন খেল দু’জনে। কাঁটা ভ্যানিশ। পুলিশের বড়কর্তার হিমুকে থাপ্পড় মারতে গিয়ে স্ট্রোক হয়, কোমা থেকে আসার পর উনি খালি দেখেন হিমু হলুদ পাঙ্গাবী পরে হাসিমুখে তার দিকে হাত বাড়িয়ে । সবাই বলে, হিমু পীর, হিমু স্বপ্নে দেখা দিচ্ছে, হিমু বলে, বড়কর্তার জ্ঞান হারানোর আগে শেষ ইমেজটা হিমুর, তাই সেটা ব্রেনে গঁেথে গেছে। এরকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়, তার ভবিষ্যৎ দেখার একটা বড় উপায় হল, মানুষকে খুব ভাল করে বোঝা, একটা মানুষ একটা বিশেষ অবস্থায় পড়লে কি ভাবে রিএক্ট করবে তা খুব ভাল করে জানা।

হিমুর নিজের ব্রেন যেহেতু বেশ স্বাধীন, হিমু অবাধে ক্ষুদ্র ডিটেলস-এ বিচরণ করে যায়। এটা আমরা পারব না। কারণ হিমুর কাছে, ভবিষ্যতের উপর বর্তমানের, ক্ষুদ্র প্রাণী, নদী, আসবাব, এদের ওপর এই মুহূর্তের মানুষের কোন বিশেষ স্থান নেই। সবি এক প্লেনে বিরাজমান। যখন যা মনে ধরে, তাতে হিমু চলে যায়, ভেসে যায়। হিমুর সাথে যারা বিশেষ দরকারী আলোচনা করে তারা এগুলোতে বিরক্ত হয়, ভাবে অপ্রাসঙ্গিক। এই যেমন পাঁচটা নীলপদ্ম কেন, তিনটে কেন নয়, এ নিয়ে নিশ্চয় হিমুর এক থিওরী থাকত, বা এই যে আমি লিখেছিলাম, টেন্ট এর কথা, হিমু আমার মত সেটা পাশ কাটিয়ে চলে যেত না, সেই অভিযান এর জায়গাটার একটা নাম দিত, সেলসিয়াস স্কেলে গ্রীষ্ম ও শীতে দুই ডেসিমাল ফিগার অব্দি দিনরাতের তাপমাত্রার একটা নিউমারিকাল এস্টিমেট দিত, সেখানকার পাখিদের আকৃতি নিয়ে বলত, গন্তব্যে পৌঁছনোর পর আমার আর ওর একটা পুরো কাল্পনিক ডায়লগ নামিয়ে দিত। এক সম্পূর্ণ নতুন দুনিয়া অনায়াসে কথায় কথায় চলে আসত, আর মিলিয়ে যেত……।

আচ্ছা হিমুর হিমুত্ব কি কোনদিন শেষ হবে? হতেই পারে এই হিমুর বাবা লোকটি, নর্মান বেটসের মা-এর মত হিমু্রই তৈরি এক কন্সট্রাক্ট, তার বাণীগুলি সব হিমুর বানানো, ছোটবেলার চূড়ান্ত আবেগময় কোন স্মৃতিকে আটকানোর প্রয়াসে এক সুচতুর ডিফেন্স মেকানিসম। না, হিমু সাইকো নয়, যদিও এই আপাত আবেগহীনতা দেখে একজন হিমুকে সিরিয়াল কিলার বলেছিলেন। সিরিয়াল কিলার আর মহাপুরুষের বিভাজন রেখা কি এত্ই সরু? কিন্ত হিমুর তো কৃষ্ণচূড়া গাছের প্রতিও মায়া আছে, ও তো জড়পদার্থেও কাল্পনিক প্রাণ সঞ্চার করে, রোগীর সাথে হাসপাতালে দেখা করতে এলে, প্রথমে জীবাণুদের কুশল জিজ্ঞেস করে, বলে ‘হ্যালো জীবাণু।’ হিমু কোন কিলার নয়, আমরা জানি, হিমু এক সংবেদনশীল, পরম মমতাময় মানুষ।

বা মসীহা। যাকে ইশ্বর বঙ্গ দেশে পাঠিয়েছেন বিশেষ কাজে। ‘এ দেশের লোক বড়ই সিনিকাল, নিজ বুদ্ধির উপর বড়ই ঘ্যাম ইহাদের, মার্ক্সবাদী নাস্তিকতা ও ভ্রান্ত মৌলবাদে ইহারা গা ভাসায়, এদের বাগে আনা সহজ নয়, তার উপর ইহারা অলস, ধর্মীয় বিধি পালনের কঠোরতা ইহাদের জন্য নহে। তুমি যাও উহাদের ফাজলামীর বিপরীতে তিনগুণ ফাজলামী করিয়া মন আওলা করিয়া দিয়া এস।’

ব্যাস। হলুদ পাঞ্জাবী আর খালি পায়ে সটান ঢাকার রাস্তায়। আর আমরা পেছনে হাঁটছি। কেউ কেউ আবার সেই ড্রাগ এডিক্ট যুবকটির মত হাঁটার তৎপরতায় হিমুকেও ওভারটেক করে বেরিয়ে যাচ্ছে। অতি-হিমু বলে কি কিছু হয়? হলেও, ওটা কোন কাজের কথা নয়। হিমু হওয়াতেই বাহাদুরি। আসুন, আমরা হিমুর পা ফেলা মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করি। হিমুর সঙ্গে হাঁটি।

লিখেছেন – ঋতেন মিত্র

আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি


আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি
------হুমায়ূন আহমেদ

একটি তরুণী মেয়ে যদি হঠাৎ
কোনো ছেলেকে এসে বলে-
আমি তোমাকে ভালবাসি।
তোমাকে না পেলে আমি বাঁচব না।
-- তখন ছেলেটির মানসিক
অবস্থা কি হয়?
সে আনন্দে আত্মহারা হয়। কিছুক্ষণ
সে থাকে on the top of the
world..তারপর সে চারদিকে এই গল্প
ছড়িয়ে দেয়। পরিচিত অপরিচিত সবাই
এই গল্প কয়েকবার শুনে ফেলে।
যারা আসে পাশে থাকেনা তাদেরকে চিঠি লিখে জানানো হয়-
তুমি শুনে খুব আশ্চর্য হবে, লিলি নামের
এক অত্যন্ত রূপবতী তরুণী গত
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটা পঁচিশ
মিনিটে হঠাৎ করে....।

যুবকটি এই গল্প যতই ছড়াতে থাকে ততই
তার আবেগ কমতে থাকে। ঘটনার
নভেলটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
সে তখন অপেক্ষা করতে থাকে কখন অন্য
কোনো তরুণী তাকে এসে এ জাতীয়
কথা বলবে।
মেয়েদের বেলায় এই
ব্যাপারটি একেবারেই ঘটেনা।
কোনো তরুনীকে যদি কোনো যুবক
এসে বলে- আমি তোমাকে ভালবাসি,
তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তখন
তরুণী আনন্দে আত্মহারা হয় না,
বরং খানিকটা ভীত হয়ে পড়ে। সে এই
ঘটনা কাউকেই জানায় না।

যে কারণে ঘটনাটা তার মনের
ভেতরে বড় হতে থাকে। সে প্রানপন
চেষ্টা করে পুরো বিষয়টা মাথা থেকে মুছে ফেলতে।
যতই সে চেষ্টা করেততই এই ঘটনা শিকড়
গজিয়ে বসতে থাকে। একসময় তরুনীটির
মনে হয়- আহারে বেচারা! সত্যি বোধহয়
আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। একসময়
সে 'আহারে বেচারা'কে নিয়ে স্বপ্ন
দেখতে শুরু করে।



যখন কেউ কারো প্রতি
মমতা বোধ করে,
তখনই
সে লজিক থেকে
সরে আসতে শুরু করে।
মায়া-মমতা-ভালবাসা এসব
যুক্তির বাইরের ব্যাপার।

-হুমায়ূন আহমেদ

—কাব্য [ﺴ হিমু ﺴ]

একটি তরুণী মেয়ে যদি হঠাৎ কোনো ছেলেকে এসে বলে- আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে না পেলে আমি বাঁচব না!
-- তখন ছেলেটির মানসিক অবস্থা কি হয়? সে আনন্দে আত্মহারা হয়। কিছুক্ষণ সে থাকে on the top of the world..তারপর সে চারদিকে এই গল্প ছড়িয়ে দেয়। পরিচিত অপরিচিত সবাই এই গল্প কয়েকবার শুনে ফেলে। যারা আসে পাশে থাকেনা তাদেরকে চিঠি লিখে জানানো হয়- তুমি শুনে খুব আশ্চর্য হবে, লিলি নামের এক অত্যন্ত রূপবতী তরুণী গত বৃহস্পতিবার বিকাল চারটা পঁচিশ মিনিটে হঠাৎ করে....।
যুবকটি এই গল্প যতই ছড়াতে থাকে ততই তার আবেগ কমতে থাকে। ঘটনার নভেলটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। সে তখন অপেক্ষা করতে থাকে কখন অন্য কোনো তরুণী তাকে এসে এ জাতীয় কথা বলবে।

মেয়েদের বেলায় এই ব্যাপারটি একেবারেই ঘটেনা। কোনো তরুনীকে যদি কোনো যুবক এসে বলে- আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তখন তরুণী আনন্দে আত্মহারা হয় না, বরং খানিকটা ভীত হয়ে পড়ে। সে এই ঘটনা কাউকেই জানায় না। যে কারণে ঘটনাটা তার মনের ভেতরে বড় হতে থাকে। সে প্রানপন চেষ্টা করে পুরো বিষয়টা মাথা থেকে মুছে ফেলতে। যতই সে চেষ্টা করেততই এই ঘটনা শিকড় গজিয়ে বসতে থাকে। একসময় তরুনীটির মনে হয়- আহারে বেচারা! সত্যি বোধহয় আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। একসময় সে 'আহারে বেচারা'কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে!

আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি
------হুমায়ূন আহমেদ"            

মাঝে মাঝে হিমু'রাও কষ্ট পাই



মাঝে মাঝে হিমু'রাও কষ্ট পাই...
হিমুদের সবচে' কষ্টের ব্যাপার হলো,তাদেরকে সবসময় অভিনয় করতে হয়,কষ্ট বলে কিছু নেই। তারা কষ্ট,মায়া,ভালোবাসা-এই সবের উর্ধে...
তারপর তাদেরকে সব কষ্টগুলো বুকে চেপে হেঁটে চলে যেতে হয়...অনেকটা দূরে...যেখানে কেবল হিমুদের জগত...চারদিকে কেবল হলুদ আর হলুদ!
এত্ত হলুদের মাঝে তারা তাদের কষ্টগুলোকেই হয়তো লুকিয়ে ফেলতে চাই...কেউ পারে...কেউ পারে না...বয়ে বেড়ায় !

হিমু হওয়ার নিয়মাবলি

হুমায়ূন আহমেদ
২২ নভেম্বর, ২০১২
         
গত বইমেলায় এক কাণ্ড ঘটল। মধ্যবয়স্ক একজন ভিড় ঠেলে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, স্যার, আমি ঠিক করেছি মার্চেও তিন তারিখ থেকে হিমু হব।হিমু হওয়ার নিয়মকানুন কী?

 আমি বললাম, মার্চের তিন তারিখ থেকে কেন? আমার জন্মদিন মার্চের তিন।এখন স্যার নিয়মকানুন বলেন।

 আমি নিয়মকানুন কী বলব? ভদলোকের দিকে তাকিয়ে আছি।কী বলব ভেবে পাচ্ছি না।আমাকে উদ্ধারের জন্য অন্যপ্রকাশের কমল এগিয়ে এল।সে গম্ভীর গলায় বলল, নিয়মকানুন সব বইয়ে দেওয়া আছে।বই পড়ে জেনে নিন।

 হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে হাঁটবেন।এইটাই প্রাথমিক বিষয়।

 

 প্রতি পূর্ণিমায় জোছনা দেখতে জঙ্গলে যেতে হবে?

 গেলে ভালো হয়, তবে দু-একটা মিস হলেও ক্ষতি হবে না।

বইমেলার ওই ঘটনার পর আমি হিমু হওয়ার নিয়মকানুন নিয়ে ভেবেছি।কিছু নিয়ম এখানে দিয়ে দিলাম।আরও কিছু মনে এলে সংশোধনী দেওয়া হবে।



হিমু হওয়ার নিয়ম :

১।.বয়স ১৮+ হতে হবে।আঠারোর নিচে হিমু হওয়া যাবে না।বিশেষ ব্যবস্থায় আঠারোর নিচেও হিমু হওয়া যাবে‚ তখন বাবা-মা এবং স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের অনুমতি লাগবে।

২।.হলুদ পাঞ্জাবি বাধ্যতামূলক।শীতকালে হলুদ চাদর পরা যেতে পারে।বাংলাদেশের সীমানার বাইরের হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবির বদলে হলুদ শার্ট বা জ্যাকেট পরতে পারবে।

৩।.খালি পা বাধ্যতামূলক না।কম দামি চামড়ার স্যান্ডেল পরা যেতে পারে।শীত প্রধান দেশের হিমুরা জুতা-মোজা পরতে পারবে।

৪।.প্রতি পূর্ণিমায় পূর্ণচন্দ্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকা বাধ্যতামূলক।মেঘ-বৃষ্টির কারণে চাঁদ দেখা না গেলে কল্পনায় চাঁদ দেখতে হবে।

৫।.বৃষ্টি বাদলার দিনে ছাতা ব্যবহার করা যাবে না।এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যেতে হবে।ঠাণ্ডা লেগে গেলে চিকিৎসা নিতে হবে।হিমুরা শরীর ঠিক রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে।এতে কোনো বাধা নেই।

৬।.রাতে নির্জন রাস্তায় হাঁটার বিধান শিথিলযোগ্য।বইপত্রে দেখা যায়‚ হিমুরা সন্ত্রাসী এবং পুলিশের সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে।নব্য হিমুদের এই কাজ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হচ্ছে।র্যাবের হাত থেকে শত হস্ত দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

৭।.কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থনকারী হতে পারবে না।তাদের একটাই নীতি হিমুনীতি‚ রাজনীতি নয়।

৮।.হিমুদের জন্য সপ্তাহে দুইদিন নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক।বাকি দিনগুলোতে মনের সুখে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

ঌ।হিমুদের পাঞ্জাবিতে পকেট থাকে না।তবে কেউ যদি পকেট রাখেন তবে দোষ হবে না।

১০।.হিমুরা কখনোই মানিব্যাগ ব্যবহার করতে পারবে না।

১১।.তারা সব সময় হাস্যমুখে থাকবে‚ সবার সঙ্গে ঠাট্টা ফাজলামি ধরনের কথা বলবে‚ তবে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যদের সঙ্গে কখনো না।তারা ঠাট্টা ফাজলামি বুঝে না।

১২।.আদি হিমুর পিতা যেসব নীতিমালা হিমুর জন্য লিখে গেছেন সেইসব নীতিমালা নিয়মিত পাঠ করতে হবে।সেই মতো জীবনচর্যাও পরিচালিত করতে হবে।

১৩।.হিমুরা কখনোই কোনো তরুণীর সঙ্গে হৃদয়ঘটিত ঝামেলায় জড়াবে না।একসঙ্গে ফুচকা খাওয়া‚ ফাস্টফুড খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

১৪।.এক হিমু অন্য হিমুকে আপন ভাইয়ের মতো দেখবে।

১৫।.বিশেষ বিশেষ উৎসবে‚ যেমন পহেলা বৈশাখ‚ বিজয় দিবস‚ একুশে ফেব্রুয়ারিতে সব হিমুরা একত্রিত হয়ে হিমু সঙ্গীত গাইবেন।হিমু সঙ্গীত এখনো লেখা হয়নি।সঙ্গীত লেখা এবং সুর দেওয়া হিমু গেজেটে প্রকাশ করা হবে।


'ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু'- উপন্যাস থেকে সংগৃহীত ।
help : http://www.swotta.com/