বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৩

সম্পূর্ন ফানগল্প------ হিমু এবং একজন বাংলাদেশী গায়িকা




হিমুর ঘুম ভেঙে গেল।অজস্র কাকার কা কা শব্দ ছুটে আসছে।তার ঘুম ভাঙার কারণ সেটাই।কবি বলেছিলেন, পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে, হিমুর মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব কাক ডাকিতেছে এখানে।সে চোখ পিট পিট করে তাকাল।এ ব্যাপারে তার বাবা উপদেশ বানীতে লিখে গিয়েছিলেন,


“বাবা হিমু, কাকপক্ষীর কা কা ধ্বনি শুনিয়া যদি সকালের ঘুম ভাঙিয়া যায় তাহলে মানুষ মনে করে তাহাদের অমঙ্গল হইব।জননী তাহার পুত্রের ক্ষতি হইবে ভাবিয়া চিন্তায় আকুল হয়। এই মাতৃ জাতি নিয়া সমস্যা। এরা আকুল হইবার জন্য বসিয়া থাকে।মহাপু্রুষদের জননী থাকিতে নেই।তাই তোমার ও জননী নেই।বাবা হিমু, বলছিলাম কাকাপক্ষীর কথা।এই পক্ষী নিয়া অনেক কুসংস্কার আছে।তুমি ওইগুলি বিশ্বাস করিবে না, অবিশ্বাস ও করিবে না।মহাপুরুষেরা কোন কিছু বিশ্বাস করেন না, অবিশ্বাস ও করেন না।তাহারা মানুষের মনে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেন।কাকপক্ষীর ডাক শুনিয়া তোমার নিদ্রাভঙ্গ হইলে চোখ পিট পিট করিয়া তাকাইবে।ইহাই নিয়ম।”


হিমু চোখ পিট পিট করিয়া তাকাইয়া ঝাপসা কিছু দেখল।ঝাপসা জিনিসটা আস্তে আস্তে পরিস্কার হওয়ার সাথে সাথে কাকের শব্দও থেমে গেল।


আপনি হিমু?

হিমুর সামনে যে ভদ্রলোক বসে আছেন তিনি দেখতে জীবনানন্দ দাশের মত।


হিমু আশ্চর্য হল না।হিমুদের আশ্চর্য হতে নেই।সে হাসিমুখে জবাব দিল, জি। আমি হিমু।



ভদ্রলোক গলা খাকারি দিয়ে বললেন, হিমু ভাই আমি আপনাকে কবিতা শোনাতে এসেছি।


শোনান।

“সন্ধ্যা হয় চারিদিকে মৃদু নীরবতা

কুটা মুখে নিয়ে এক শালিখ যেতেছে উড়ে চুপে

গরুর গাড়িটি যায় মেঠো পথ বেয়ে ধীরে ধীরে

আঙিনা ভরিয়া আছে সোনালি খড়ের স্তুপে

পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে

পৃথিবীর সব রুপ লেগে আছে ঘাসে”


কবিতা শুনতে শুনতে হিমু ঘুমিয়ে পড়ল আবার।



হিমু রাস্তায় বের হয়েছে।হলুদ পাঞ্জাবী এবং জুতা ছাড়া পা নিয়ে হেঠে যাচ্ছে।এমন সময় হঠাৎ একটি পাজেরো তার ঠিক পিছনে এসে থামল।হিমু পিছনে তাকাল না।সে আগের মতই হাঠতে লাগল।


এই হিমু। হিমু........................ পিছন থেকে একজন কিন্নরকন্ঠী হিমুকে ডাকছেন।
>

হিমু ঘুরে তাকাল।হলুদ শাড়ি পরা এক ভদ্রমহিলা।উনি কি মাজেদা খালা?না মাজেদা খালার ত বয়স অনেক বেশী।তার ওপর তিনি একটা ছোটখাট হাতির মত।এখন যে ভদ্রমহিলা সামনে তার বয়স অনেক কম হবে এবং তাকে কোন ক্রমেই হাতি বলা যায় না।বড়জোর হাতির বাচ্চা বলা যায়।

হিমু সুন্দর করে হাসল।

ভদ্রমহিলা বললেন, হিমু আপনি আমার গাড়িতে উঠেন।তাড়াতাড়ি।কুইক।


কি ব্যাপার! মাজেদা খালা কি কোনভাবে স্বাস্থ্য টাস্থ্য কমিয়ে এরকম ভাব ধরেছেন নাকী।হিমু বাধ্য ছেলের মত গিয়ে গাড়িতে উঠল।


এক আলিশান বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামল।মহিলা হিমুকে নিয়ে ভিতরে গেলেন।এতক্ষন তিনি কোন কথাই বলেন নি।চুপ করে বসেছিলেন।হিমুও বলে নি।সে এই মহিলাকে চিনতে পারছে না।

মহিলা এবার হিমুকে বসিয়ে বললেন , হিমু আমি আপনার কথা অনেক পড়েছি।আমি আপনার সাহায্য চাই।আই ওয়ান্ট ইওর হেল্প।

হিমু বলল কি সাহায্য? থানা পুলিশ জাতীয় কিছু?

মহিলা হিমুর আরেকটু কাছে এসে বললেন না।আমি একজন সিঙার।মানে গান গাই।আজ আপনাকে এখানে আনার কারণ কয়েকটা গান শোনানো।কোন একটি আশ্চর্য কারণে আমার এলবাম বের হবার কয়েকদিনের মধ্যেই কাকেরা চিৎকার করতে থাকে।আমি এটার কোন কারন বুঝতে পারছি না।



হিমু গম্ভীর হয়ে বলল, সব বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।বিরোধী দলের সাথেও আমার খাতির ভাল।আচ্ছা আপনার সকল এলবামের আগে মন কেন? এত যদি মন তাহলে আপনি তো মনে মনে গাইলেই পারতেন।কিছু কাকের জীবন রক্ষা হত।

আর বলবেন না।গান গাইতে গেলে আমার মন কেমন কেমন করে।তাই এই নাম,

১।.মনের ছোট্ট ঘরে,

২।.মন ছুঁয়ে যায়,

৩।. মন মানে না,

৪।.মন দিয়েছি তোমাকে,

৫।.মন নাচেরে,

৬।.মনের তুলিতে আঁকি

একটা রবীন্দ্র সঙীত নিয়েও করেছি।অ্যালবামের নাম মনে কী দ্বিধা...


আপ্নে নাকী রবীন্দ্রনাথের পিছেও লাগছেন? বুড়া লোকটার পিছন ক্যানো লাগলেন?দেখেন না তার সারা মুখে দাড়ি।কোনদিক দিয়া ভাত খায় তারই ঠিক নাই।


ঠিক বলেছেন।গায়িকা সায় দেন।

হিমু আবার বলে, গুনগুন করে গান গাওয়াই উচিত ছিল আপনার।এই গান গাইয়া কত গরু ছাগল মহিষ পাগল করছেন জানেন?এখন আপ্নার গান না শুনলে তারা ঘুমায় না? গরীব চাষীরা হালের বলদ দের আপনার গান শুনাইব ক্যাম্নে?তারপর ষাড়েরা আপনার মিউজিক ভিড্যু না দেখলে পাগল হইয়া যায়। এখন আপ্নার জামাই মহফুজ কি তাদের টিভি সাপ্লাই দিব?

এই সমস্যার জন্যই ত আপনাকে ডাকলাম।একটা উপায় বের করেন।আমার নতুন এলবাম ইশক দিওয়ানা থেকে একটা গান শুনেন।বলেই মহিলা স্টার্ট দিলেন।


হিমু বুঝতে পারল ইদানীং কেন তার কাকের কা কা শুনে ঘুম থেকে উঠতে হয়।মহিষগুলো কেন মানুষ দেখলেই তেড়ে মারতে আসে। মহিলা গান গেয়ে চলেছেন।হিমু এর আগে এরকম পরিশ্তহিতে পড়ে নি।হিমুর বাবা উপদেশ বানীতে বলেছিলেন, মাথা ঠান্ডা রাখতে সবসময়।মহাপুরুষেরা মাথা গরম করেন না।


কিন্তু হিমু আজ কি করবে ভেবে পেল না।মহিলা দ্বিতীয় গান শুরু করেছেন।হঠাৎ হিমু ঝেড়ে দৌড় দিল। তারপর থেকে সে দৌড়ের উপর আছে।এইখানেই গল্প শেষ হইতে পারিত - কিন্তু হিমুর মাথায় ভর করেছে - পাভেল। সে হিমুর বাপ। হিমু আজকাল তাকেই মুরুব্বি মানে। অর্থাৎ বস মানে।


তাই হিমুর ঝেড়ে দৌড় দেওয়ার কথা থাকল, সে দৌড় দিল না। গাইতে গাইতে গায়িকা যেই চোখ বন্ধ করল - সেই ফাকে হিমু স্লিপ কাটল। বাসায় ফিরে এসে দেখে রুপা পোলাও মাংস পাঠিয়ে দিয়েছে। আশ্চর্য্য ব্যাপার আজ সকালেই তার পোলাও খেতে ইচ্ছা করছিল। রুপা কেমনে জানল।


ঠিক এই সময় রুপার ফোন এল - রুপা জানাল সে এখন গাজীপুরে। তা নাহলে নিজেই চলে আসত হ্যাপী বার্থ ডে জানাতে। নিজেকে আজকে নাকি ইভা ইভা লাগছে। আবার গুন গুন করে মাছির মত ভ্যান ভ্যান করছে। রুপা প্রতি বছরই একই কথা বলে। মিথ্যুক মেয়ে - কিন্তু জোসনার মত পবিত্র। এত ঘন ঘন গাজীপুর যায় কেন! সেখানে নানান কিসিমের রেষ্ট হাউজে তার এত কি কাম! না আর ভাবতে পারে না হিমু। জোসনার পবিত্রতা নিয়ে সে গাজীপুরে জংগলে রেষ্ট হাউজে কি করে! পোলাও খায় আর ভাবে একদিন যাইয়্যা সারপ্রাইজ দিওন লাগব। নাকি আবার নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যেতে হবে। ডাইরী খুলে দেখতে হবে বাবায় কি কইয়্যা গেছে - "হে মানব সন্তানগন, তোমরা কোন কিছুতেই সারপ্রাইজ হইও না। কারন সারপ্রাইজের প্রাইজ অনেক বেশি"।

Collection : http://www.amarblog.com/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন