বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৩

হিমু হওয়ার নিয়মাবলি

হুমায়ূন আহমেদ
২২ নভেম্বর, ২০১২
         
গত বইমেলায় এক কাণ্ড ঘটল। মধ্যবয়স্ক একজন ভিড় ঠেলে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, স্যার, আমি ঠিক করেছি মার্চেও তিন তারিখ থেকে হিমু হব।হিমু হওয়ার নিয়মকানুন কী?

 আমি বললাম, মার্চের তিন তারিখ থেকে কেন? আমার জন্মদিন মার্চের তিন।এখন স্যার নিয়মকানুন বলেন।

 আমি নিয়মকানুন কী বলব? ভদলোকের দিকে তাকিয়ে আছি।কী বলব ভেবে পাচ্ছি না।আমাকে উদ্ধারের জন্য অন্যপ্রকাশের কমল এগিয়ে এল।সে গম্ভীর গলায় বলল, নিয়মকানুন সব বইয়ে দেওয়া আছে।বই পড়ে জেনে নিন।

 হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে হাঁটবেন।এইটাই প্রাথমিক বিষয়।

 

 প্রতি পূর্ণিমায় জোছনা দেখতে জঙ্গলে যেতে হবে?

 গেলে ভালো হয়, তবে দু-একটা মিস হলেও ক্ষতি হবে না।

বইমেলার ওই ঘটনার পর আমি হিমু হওয়ার নিয়মকানুন নিয়ে ভেবেছি।কিছু নিয়ম এখানে দিয়ে দিলাম।আরও কিছু মনে এলে সংশোধনী দেওয়া হবে।



হিমু হওয়ার নিয়ম :

১।.বয়স ১৮+ হতে হবে।আঠারোর নিচে হিমু হওয়া যাবে না।বিশেষ ব্যবস্থায় আঠারোর নিচেও হিমু হওয়া যাবে‚ তখন বাবা-মা এবং স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের অনুমতি লাগবে।

২।.হলুদ পাঞ্জাবি বাধ্যতামূলক।শীতকালে হলুদ চাদর পরা যেতে পারে।বাংলাদেশের সীমানার বাইরের হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবির বদলে হলুদ শার্ট বা জ্যাকেট পরতে পারবে।

৩।.খালি পা বাধ্যতামূলক না।কম দামি চামড়ার স্যান্ডেল পরা যেতে পারে।শীত প্রধান দেশের হিমুরা জুতা-মোজা পরতে পারবে।

৪।.প্রতি পূর্ণিমায় পূর্ণচন্দ্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকা বাধ্যতামূলক।মেঘ-বৃষ্টির কারণে চাঁদ দেখা না গেলে কল্পনায় চাঁদ দেখতে হবে।

৫।.বৃষ্টি বাদলার দিনে ছাতা ব্যবহার করা যাবে না।এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যেতে হবে।ঠাণ্ডা লেগে গেলে চিকিৎসা নিতে হবে।হিমুরা শরীর ঠিক রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে।এতে কোনো বাধা নেই।

৬।.রাতে নির্জন রাস্তায় হাঁটার বিধান শিথিলযোগ্য।বইপত্রে দেখা যায়‚ হিমুরা সন্ত্রাসী এবং পুলিশের সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে।নব্য হিমুদের এই কাজ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হচ্ছে।র্যাবের হাত থেকে শত হস্ত দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

৭।.কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থনকারী হতে পারবে না।তাদের একটাই নীতি হিমুনীতি‚ রাজনীতি নয়।

৮।.হিমুদের জন্য সপ্তাহে দুইদিন নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক।বাকি দিনগুলোতে মনের সুখে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

ঌ।হিমুদের পাঞ্জাবিতে পকেট থাকে না।তবে কেউ যদি পকেট রাখেন তবে দোষ হবে না।

১০।.হিমুরা কখনোই মানিব্যাগ ব্যবহার করতে পারবে না।

১১।.তারা সব সময় হাস্যমুখে থাকবে‚ সবার সঙ্গে ঠাট্টা ফাজলামি ধরনের কথা বলবে‚ তবে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যদের সঙ্গে কখনো না।তারা ঠাট্টা ফাজলামি বুঝে না।

১২।.আদি হিমুর পিতা যেসব নীতিমালা হিমুর জন্য লিখে গেছেন সেইসব নীতিমালা নিয়মিত পাঠ করতে হবে।সেই মতো জীবনচর্যাও পরিচালিত করতে হবে।

১৩।.হিমুরা কখনোই কোনো তরুণীর সঙ্গে হৃদয়ঘটিত ঝামেলায় জড়াবে না।একসঙ্গে ফুচকা খাওয়া‚ ফাস্টফুড খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

১৪।.এক হিমু অন্য হিমুকে আপন ভাইয়ের মতো দেখবে।

১৫।.বিশেষ বিশেষ উৎসবে‚ যেমন পহেলা বৈশাখ‚ বিজয় দিবস‚ একুশে ফেব্রুয়ারিতে সব হিমুরা একত্রিত হয়ে হিমু সঙ্গীত গাইবেন।হিমু সঙ্গীত এখনো লেখা হয়নি।সঙ্গীত লেখা এবং সুর দেওয়া হিমু গেজেটে প্রকাশ করা হবে।


'ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু'- উপন্যাস থেকে সংগৃহীত ।
help : http://www.swotta.com/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন